ফিরে দেখা ২০১৫ পর্ব-১ : বছর জুড়ে অস্থির ছিল রাবি

ফিরে দেখা ২০১৫ পর্ব-১ : বছর জুড়ে অস্থির ছিল রাবি

আতিকুর রহমান, রাজশাহী : সদ্য বিদায়ী ২০১৫ সালটা নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে পার করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। বছরের শুরুতেই শীতকালীন ছুটি শেষে রাজনৈতিক অস্থিরতার কবলে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। গত বছরের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় হরতাল-অবরোধের মতো সহিংস কর্মসূচি। ফলে ছুটি শেষে ১২ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ-পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। এরপর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে গিয়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিভাগ ক্লাশ-পরীক্ষা নিতে শুরু করে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম শুরু হলেও দেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে দীর্ঘ ১০৫ দিন ধরে বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থা। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর ১৫ এপ্রিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি রুটে মোট ১৬টি বাস চালু করা হয়। পরে ধীরে ধীরে সব রুটে সবকটি বাস পুনরায় চলাচল শুরু করে।

এদিকে, ১৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন হুমকির শিকার হন রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী কাছ থেকে। রাজশাহীতে ঐ সাংসদের নিজস্ব মালিকানায় পরিচালিত শাহ মখদুম মেডিকেল কলেজে অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করার অভিযোগে জরিমানা করায় এ হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে উপাচার্য সাংবাদিকদের সেসময় জানিয়েছিলেন।

এর ঠিক পরদিনই ১৬ এপ্রিল রাজশাহী মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। অভিযোগ ওঠে, ডাবলু সরকারের মনোনীত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্যকে এ হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

ঠিক এসময়েই হুমকিদাতার তালিকায় নাম লেখায় রাবি রাবি ছাত্রলীগও। ঘটনার পরেই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করেন ছাতলীগের নেতাকর্মীরা। তবে এ ঘটনার দুইদিন পর উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি বাদ দিয়ে ১৮ এপ্রিল সাত দফা দাবিতে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগ। ২১ এপ্রিল দাবি বাস্তবায়নের জন্য উপাচার্য বরাবর স্মরকলিপিও প্রদান করে সংগঠনটি।

এছাড়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নির্যাতন, মামলা ইত্যাদিও ছিল রাবি ক্যাম্পাসের নিয়মিত ঘটনা। উপাচার্যকে হুমকির ঘটনা ১৭ এপ্রিল কালের কণ্ঠের পাতায় তুলে ধরায় তার বিরুদ্ধে ১৯ এপ্রিল মানহানি মামলা করা হয়। এরপর ১৫ জুন সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক যুগান্তরের রাবি প্রতিনিধি হাসান আদিবকে ‘দেখে নেওয়ার হুমকি’ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাজশাহীতে বেড়াতে আসা ঢাকার প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয়ের এক শিক্ষার্থীকে চাঁদার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলে প্রায় ২০ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এছাড়া ওই শিক্ষার্থীর বান্ধবী ও রাজশাহী কলেজে অধ্যায়নরত এক ছাত্রীর সঙ্গে জোর করে বিয়ে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশের জের ধরে তাকে এ ধরনের হুমকি দেওয়া হয়।

২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত মতিহার হলের ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার এবং প্রকৌশলীদের দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়মের কারণেই এমনটি হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ওই দিন তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেন হলের শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ভবনের ফাটলের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

বছরের ১৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল পুন:নির্ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র পে-স্কেল ঘোষণার দাবিতে বিভিন্ন সময় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, কর্মবিরতি, অবস্থান ধর্মঘট সহ নানা কর্মসূচি পালন করে তারা। বছরের শেষে ১৫ ডিসেম্বও শিক্ষকদরে দাবি না মেনে পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। এতে আবারও আন্দোলনে নামে শিক্ষকরা।

৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম মার্কেটের সিলসিলা রেস্টুরেন্টের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও গণশিল্পী সংস্থার সদস্য বাসুদেবকে পিটিয়ে আহত করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কর্মী সাদ্দাম হোসেন সজীবসহ তার সহযোগীরা। এঘটনার পর সংস্কৃতিকর্মীদের লাগাতার মানববন্ধন, গণস্বাক্ষর, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট সহ নানা আন্দোলনের মুখে ১৮ জুন উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে ছাত্রলীগকর্মী সাদ্দাম হোসেন সজীবকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকৌশল অনুষদ অন্তর্ভুক্ত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) নামে নতুন বিভাগ খোলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-সমাবেশ করে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (এপিইই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

রাজনীতির নামে চাঁদাবাজির কথা কারো অজানা নয়। এমনই আর একটি ঘটনা ঘটে চলতি বছরের ৬ অক্টোবর। মাদার বখশ হলের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তাকে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগ কর্মী রবিউল ইসলাম বনির বিরুদ্ধে। এঘটনার পরদিন ৭ অক্টোবর ছিনতাইকালে ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment