ডিমেনশিয়া রোগ নিয়ে আলোচনা সভা

ডিমেনশিয়া রোগ নিয়ে আলোচনা সভা

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

‘প্রতি ৩ সেকেন্ডে, পৃথিবীতে কেউ না কেউ ডিমেনশিয়াতে আক্রান্ত হয়’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বিশ্ব আলঝেইমারস মাস উপলক্ষে আজ ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ (শনিবার) ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এ্যালাইড হেলথ সাইন্সেস অনুষদ এবং আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর  যৌথ আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭১ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা ও ডিমেনশিয়া ফ্যামেলি গোল্ডেন কেয়ারগিভারদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সাইন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডা. এ কে এম নুর–উন-নবী, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের ঢাকা জেলা গভর্নর এম খায়রুল আলম। অনুষ্ঠানে ডিমেনশিয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়ো টেকনোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মশিউর রহমাান।

এ্যালাইড হেলথ সাইন্সেস অনুষদ এর ডীন প্রফেসর ড.আহমেদ ইসমাইল মুস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন রোটারিয়ান সেজান খান, আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশের সেক্রেটারী জেনারেল মো. আজিজুল হক, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হারুন উর রশীদ।

অনুষ্ঠানে ডিমেনশিয়া ফ্যামেলি কেয়ারগিভার সাইফউদ্দিন আহমেদ, তাসলিমা কবির, অধ্যাপক শাহীন আহমেদ ও এ্যাডভোকেট আব্দুল মালেককে গোল্ডেনকেয়ার গিভার সম্মাননা প্রদান করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, সত্তুরের দশকে ডায়াবেটিক রোগী খুঁজে পাওয়া যেত না। কারণ এ রোগ সম্পর্কে মানুষ তখন জানতই না। এখন যেমন ডিমেনশিয়া রোগ সম্পর্কে অনেকেই জানে না। তাই এখন থেকে মানুষের মধ্যে এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেন ড. কাজী খলিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ৭ শতাংশ মানুষ প্রবীণদের অন্তর্ভূক্ত। এই প্রবীণ সমাজের মধ্যে ডিমেনশিয়া রোগীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। তাই এখনই সচেতনতা বাড়ানো উচিত।

ডিমেনশিয়া রোগ সম্পর্কে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা হওয়া উচিত উল্লেখ করে বরেণ্য এই অর্থনীতিবিদ বলেন, শহরাঞ্চলে সচেতনতা বাড়াতে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করলেও গ্রামাঞ্চলের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। সেখানে বেশিরভাগ মানুষই ডিমেনশিয়া রোগের নাম শোনেনি। এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। এ সময় ড. কাজী খলিকুজ্জামান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও আলঝেইমার সোসাইটি অব বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেন এ রকম সময়পোযোগী একটি সেমিনারের অয়োজন করার জন্য।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. একেএম নূর উন নবী বলেন, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ডিমেনশিয়া সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এমন কথা আমরা গত দু’তিন বছর ধরেই শুনছি কিন্তু কীভাবে সচেতনতা বাড়ানো যেতে পারে সে ব্যপারে এখনো কোনো কার্যকরী রূপরেখা তৈরি হয়নি। এ ব্যাপারে নীতিমালা তৈরি করতে সবার আগে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. একেএম নূর উন নবী আরো বলেন, বৃদ্ধাশ্রমের মতো দেশে ডিমেনশিয়া কেয়ার সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতে অনেক ডিমেনশিয়া সেন্টার রয়েছে। তাদের আদলে আমাদের দেশেও ডিমেনশিয়া কেয়ার সেন্টার গড়ে তোলা উচিত।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ডিমেনশিয়া এক নীরব ঘাতক। এটা এক জটিল রোগ। এ রোগ সম্পর্কে এখনো আমাদের দেশে যথার্থ সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। দেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও এ রোগ সম্পর্কে জানেনা। সবাই মনে করে, বৃদ্ধ বয়সে এরকম হতেই পারে। স্মৃতি লোপ পাওয়াকে তারা রোগ হিসেবে মেনে নিতে চায় না। এ পরিস্থিতির পরিবর্তন জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি। নজরুল ইসলাম তালুকদার আরো বলেন, ডিমেনশিয়া রোগের উপর বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও নার্স তৈরি করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

Sharing is caring!

Leave a Comment