বিদেশে উচ্চশিক্ষা : দশ পরামর্শ

বিদেশে উচ্চশিক্ষা : দশ পরামর্শ

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক বৃত্তি, ফেলোশিপ কিংবা ব্যক্তিগত অর্থায়নে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবাসে পা রাখেন। ইউরোপ, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ার পাশাপাশি পিএইচডি করার জন্যও শিক্ষার্থীরা আবেদন করেন। যাঁরা উচ্চমাধ্যমিক বা স্নাতক শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য চেষ্টা করেন, তাঁদের আবেদন করার ধাপগুলো প্রায় একই। দেশে-প্রবাসে বাংলাদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ভিনদেশে পড়তে ইচ্ছুকদের জন্য ১০টি পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

১. প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ আর সেশন ঠিক করে নিতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদন করার ধরন ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে একটু আলাদা। দেশের বাইরে পড়ালেখার পরিকল্পনা থাকলে তাই আগে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলো সম্পর্কে ‘গুগল’ করে বিস্তারিত জেনে নিন। আবেদনের শেষ দিন, কী কী কাগজপত্র পাঠাতে হবে, খরচ কেমন…জেনে, বুঝে নিন, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোন বিষয়টি আপনার জন্য মানানসই। সাধারণত মার্চ ও অক্টোবর মাসের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করতে হয়। কয়েকটি সেশনে ভর্তি করা হয়, এ ক্ষেত্রে কোন সেশনে ভর্তি হতে চান, সে পরিকল্পনাও করে ফেলুন।

২. মূল সনদ জোগাড় করা: শিক্ষা বোর্ড বা কলেজ থেকে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মূল নম্বরপত্র ও সনদ সংগ্রহ করে রাখুন। স্নাতকোত্তরে আবেদনের জন্য অনার্সের নম্বরপত্র আর সনদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকার অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়-নির্ধারিত খামে সনদ পাঠাতে হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

৩. পাসপোর্ট তৈরি রাখা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনের সময় অনেক ক্ষেত্রে পাসপোর্ট নম্বর প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া স্যাট, জিআরই, জিম্যাট, আইইএলটিএস, টোয়েফল পরীক্ষা দিতে পাসপোর্ট কাজে লাগে। পাসপোর্ট না থাকলে তৈরি করে ফেলতে হবে কিংবা মেয়াদ ছয় মাসের কম হলে নতুন করে বানাতে হবে। পাসপোর্টে নামের বানান যেন মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক সনদের মতোই হয়। বানানের গরমিলের কারণে অনেকেই ভর্তি বা বৃত্তির আবেদন করতে পারেন না।

৪. স্যাট, জিআরই, জিম্যাট, আইইএলটিএস অথবা টোয়েফল পরীক্ষা দিয়ে ফেলুন: বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রকাশের জন্য স্যাট, জিআরই বা জিম্যাট স্কোরকে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া ভাষা-দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে আইইএলটিএস ও টোয়েফল স্কোরের গুরুত্ব অনেক। এই পরীক্ষাগুলোর জন্য সময় দিয়ে, পরিশ্রম করে, যত বেশি সম্ভব স্কোর তুলতে হবে।

৫. এলওআর, এসওপি, এলওআই তৈরি করা: বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে এলওআর, এসওপি ও এলওআই শব্দগুলো খুব পরিচিত। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা একাডেমিক ক্ষেত্রে খুব আলোচিত ব্যক্তির কাছ থেকে ‘লেটার অব রিকমেন্ডেশন’ বা এলওআর সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এলওআরের নির্দিষ্ট ধরন থাকে, যা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করে নেওয়া যায়। যে বিষয়ে বা বিভাগে আবেদন করবেন তা কেন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, সম্ভাব্য গবেষণার বিষয়, কীভাবে গবেষণা করতে চান, কিসে আগ্রহ—এসব নিয়ে ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’ বা এসওপি এবং ‘লেটার অব ইন্টারেস্ট’ বা এলওআই লিখতে হয়। এই দুটি পত্র লেখার সময় শতভাগ নিজের মতো লিখতে হবে। অন্য কোথাও থেকে ‘কাট-কপি-পেস্ট’ কোনোভাবেই করা যাবে না। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে নিজের ভাষায় এই পত্র লিখতে হয়। যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হবে তার জন্য আলাদা আলাদা এলওআর, এসওপি ও এলওআই তৈরি করতে হবে।

৬. অন্যান্য সনদ সংগ্রহ করে ফেলা: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আবেদনের সময় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে কাজের অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার ও অংশগ্রহণের সনদ বেশ গুরুত্বের চোখে দেখা হয়। এ ধরনের সনদ আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হয়।

৭. শেষ সময়ের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন পাঠাতে হবে: বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের শেষ তারিখের প্রায় ২০-২৫ দিন আগেই আবেদনপত্র কুরিয়ারে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে আবেদনপত্র পাঠাতে একেক সময় লাগে, এ ক্ষেত্রে হাতে সময় নিয়ে কুরিয়ার করতে হবে। জমা দেওয়ার তারিখের পরে আবেদনপত্র পৌঁছালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা গ্রহণ করা হয় না।

৮. সনদ সত্যায়িত করা: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের সঙ্গে মূল সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সনদ সত্যায়িত করতে হবে। ভুয়া কিংবা নকল সত্যায়ন করলে ভর্তি-প্রক্রিয়া যেকোনো সময় আটকে যেতে পারে।

৯. দূতাবাসে খোঁজখবর নেওয়া: বিভিন্ন দেশে পড়ার জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য তথ্য পাওয়ার সুযোগ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আমেরিকান সেন্টার, যুক্তরাজ্যে পড়ার জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিল, জার্মানির জন্য গ্যেটে ইনস্টিটিউটসহ ওয়েবসাইট থেকে বৃত্তি এবং ফেলোশিপের তথ্য পাওয়া যাবে।

১০. নেটওয়ার্কিং করা: বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং করা বেশ জরুরি। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চান সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংগঠনসহ ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে তথ্য-সহযোগিতা নিতে পারেন।

পরামর্শ দিয়েছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটির সহকারী অধ্যাপক বি এম মইনুল (পিএইচডি, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট শিকাগো, যুক্তরাষ্ট্র), পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রভাষক বেনজির শামস (মাস্টার্স ইন পপুলেশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, কানাডা), নাজিয়া চৌধুরী (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি—এমআইটি, যুক্তরাষ্ট্র; ডিইউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুল, সিঙ্গাপুর), সানজিদা শাহাব উদ্দিন (ইউনিভার্সিটি অব এন্টওয়ার্প, বেলজিয়াম), রাশিদুল হাসান (আরডব্লিউটিএইচ আচেন ইউনিভার্সিটি, জার্মানি), ইমরান হাসনাত (ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা, যুক্তরাষ্ট্র) ও মো. মাহমুদুল হক (ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স, ইউকে)।

সূত্র: প্রথম আলোfavicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment