ঢাবি শিক্ষার্থীদের নেপাল জয়

ঢাবি শিক্ষার্থীদের নেপাল জয়

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

নেপালের ত্রিভূবন ইউনিভার্সিটিতে হয়ে গেল সাউথ এশিয়ান ইকোনমিক্স স্টুডেন্টস মিট। দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতি শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় এ সম্মেলনে গবেষণাপত্র প্রতিযোগিতা এবং কুইজে জিতেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।


ত্রয়োদশ সামিট অনুষ্ঠিত হয় ২৯ জানুয়ারি-৩ ফেব্রুয়ারি। ভেনু নেপালের ত্রিভূবন ইউনিভার্সিটি। দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থনীতি বিভাগের বাছাইকরা শিক্ষার্থীরাই এ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়। এ বছর মালদ্বীপ বাদে দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশ থেকে ৭৪জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। বাংলাদেশ থেকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী। তারা হলেন: ইমতিয়াজ আহমেদ, মাহির এ. রহমান, কাজী গোলাম তাশফিক, তন্বী হাসান, নাহিয়ান বিন খালেদ, সিমাব রহমান, তাহিয়া আনান, তানভীর মাহমুদ, নাহিয়ান আজাদ এবং ফারিয়া তাবাসসুম।

সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক গবেষণা প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ছয়টি গবেষণা প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা, অর্থনীতি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা এবং উদীয়মান অর্থনীতিবিদ প্রতিযোগিতাও হয় সম্মেলনে।

গবেষণাপত্র প্রতিযোগিতায় ছয়টি বিষয়ে প্রত্যেক দেশ থেকে একজন অংশ নেয়। সম্মেলনে প্রতিটি গবেষণা পত্রের ওপর ১২ মিনিটের প্রেজেন্টেশন এবং ৫ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল। সম্মেলন শেষে ৬ বিষয়ে বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে ‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং ক্ষুধা’ বিষয়ে বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড পান কাজী গোলাম তাশফিক। পাশাপাশি অর্থনীতি ভিত্তিক কুইজে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য হিসেবে পুরষ্কার জেতেন তাহিয়া আনান। পুরষ্কার হিসেবে ছিল সার্টিফিকেট এবং ক্রেস্ট।

সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ দল ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত নেপালের চন্দমন্দির, সম্ভুনাথ মন্দির ঘুরে দেখেন। তাহিয়া আনান জানান, ‘চন্দ গিরি হিলস ভূমি থেকে ২৫০০ মিটার উঁচুতে। এখানে ক্যাবল কার বেশ রোমাঞ্চকর। মেঘ আর পাহাড়ের মিশে যাওয়া এত কাছ থেকে এই প্রথম দেখি আমরা। ’

নেপালের বাসিন্দাদের আন্তরিকতাও মুগ্ধ করে তাদের। মুগ্ধ করেছিল দেশটির হস্তশিল্প। দলের সদস্য নাহিয়ান বিন খালেদ জানান, ‘আমরা অন্নপূর্ণা হোটেলে ছিলাম। পাশে ছিল থামেল নামের একটি জায়গা। সেখান কেনাকাটা করেছিলাম। হস্তশিল্প-ই বেশি। আমাদের পর্যটক ভেবে চড়া দাম হেঁকেছিল দোকানিরা। আমরাও নাছোড়বান্দা। কমদামেই কেনাকাটা করেছি। ’

সম্মেলনের শেষের দিন ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাবির শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করেন তিনটি বাংলা গান। শেষ গানটি ছিল ‘মধু হই হই বিষ হাওয়াইলা’। অনুষ্ঠানের পর গানটি নাকি সবার মুখে মুখে ছিল!

প্রতিযোগিতায় সেরা গবেষণাপত্র জিতেছে কাজী গোলাম তাশফিক। তার গবেষণা সম্পর্কে জানান, ‘আমি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছি, দক্ষিণ এশিয়ায় দারিদ্র্য অনেক কমে আসলেও খাদ্য নিরাপত্তা এখনো দুর্বল। এ দুর্বলতা কাটাতে হলে খাদ্য ও কৃষিভিত্তিক বাণিজ্য সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় সার্ক থাকলেও ফুড ব্যাংক নিয়ে কোনো সংস্থা নেই। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খাদ্য সংকট দেখা দিলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ভূমিকা কী হবে, তা ঠিক করা হয়নি।

এ ছাড়া ধান, গমসহ নিয়মিত খাদ্য সংরক্ষণে ঐকমত্য নেই। যেমন ধানে মৃত ধান থাকার সর্বোচ্চ পরিমাণ বাংলাদেশে ৪%, ভারতে ৮% এবং পাকিস্তানে ২%। ফলে এক দেশের ধান আরেক দেশে ব্যবহারের নীতিগত ঝামেলা সৃষ্টি হয়। ’

পুরষ্কার বিজয় নিয়ে কাজী গোলাম তাশফিক অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘সম্মেলনটি শিক্ষার্থীদের সম্মানজনক সম্মেলনগুলোর একটি। এখানে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে পুরষ্কার পাওয়া খুবই আনন্দের। আমি গবেষণায় কাজ করতে চাই। এ অর্জন ভবিষ্যতে আমাকে বেশ সহযোগিতা করবে। ’

বাংলাদেশ দল তাদের বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিম রায়হান, ড. সায়েমা হক, শেখ জাফর এমরান, মাহতাব উদ্দিনসহ অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। সম্মেলনটিতে যাতায়াত এবং থাকা খাওয়ার সব খরচ বহন করেছে বিশ্বব্যাংক এবং নেপাল ইকোনমিক অ্যাসোসিয়েশন।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment