সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কত দূর

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কত দূর

  • সম্পাদকীয় ডেস্ক

এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর স্বপ্ন প্রায় সবাই দেখেন। কিন্তু ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসনসংখ্যা আর পাস করা শিক্ষার্থীদের সংখ্যার মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। তাই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চরম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হবে। ছুটে বেড়াতে হবে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেটি কত কষ্টকর, তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।

সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে কথা হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নিজেও আগ্রহ দেখিয়েছিলেন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে। অনেক শিক্ষাবিদ শিক্ষার্থীদের বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে দিনের পর দিন লেখালেখি করেছেন। কিন্তু সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। জানা যায়, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ব্যাপারে আগ্রহী নয়। তাদের আয় নাকি কমে যাবে! তাই এবারও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে দিতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নাকের জল চোখের জল এক করতে হবে।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য একেকজন শিক্ষার্থী সাত-আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। তা করতে গিয়ে কোনো শিক্ষার্থী হয়তো আগের দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিল, পরের দিন যেতে হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে, তার পরের দিন আসতে হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থাৎ তাকে দৌড়ের ওপরই থাকতে হবে। আর তা করতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী, এমনকি মেয়ে শিক্ষার্থীরও ঠিকানা হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের গাছতলা। সেখানেই বৃষ্টিতে ভিজতে হবে, রোদে শুকাতে হবে। ঝুঁকি নিয়ে রাতও পার করতে হয় সেখানেই। জরুরি প্রয়োজনে ওয়াশরুম ব্যবহারেরও সুযোগ হয় না অনেকের। এটা রীতিমতো অমানবিক। দেশের এপ্রান্তে-ওপ্রান্তে যাতায়াতের জন্য অর্থের পাশাপাশি মনোদৈহিক কষ্ট তো আছেই। কয়েক বছর ধরেই মেডিক্যাল কলেজগুলোতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় সেখানে শিক্ষার্থীদের এমন অমানবিক দুর্ভোগে পড়তে হয় না। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারছে না? বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকদের জাতি ভিন্ন চোখে দেখে। শিক্ষার্থীদেরও অভিভাবক তাঁরা। তাই শিক্ষার্থীদের ভালো-মন্দ নিয়ে তাঁরা ভাববেন এমনটিই প্রত্যাশিত।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সরকারি অর্থেই পরিচালিত হয়। তাই সরকারকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সেই উদ্যোগের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেবে।

সূত্র: কালের কণ্ঠfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment