প্রথা ভেঙে মানুষের পাশে

প্রথা ভেঙে মানুষের পাশে

  • তানজুমুল ইসলাম তারেক

মেরিন সুলতানা মলি, এক মানবতাবাদী নারীর নাম। ফেসবুককে যখন অন্য সবাই ফটো, চেক ইন, ফান পোস্ট নিয়ে সরব, ঠিক তখনই এই নারী ব্যাস্ত কীভাবে রক্ত রোগে আক্রান্ত রুগীদের পাশে দাঁড়ানো যায়। তাদেরকে কীভাবে সচেতন করা যায়, ভালো রাখা যায়। কাজ করছেন মারাত্মক রক্তক্ষরণজনিত রোগ হিমোফিলিয়া নিয়ে। কীভাবে এই উদ্যোগ নিলেন প্রশ্ন করা হলে বললেন, ‘আমার ছেলে হাবিব জন্মগতভাবেই রক্তক্ষরণজনিত এই রোগে আক্রান্ত। হাসপাতালে তাই ছেলের জম্নের পর থেকেই যাওয়া হতো।’

18109610_1803176779999382_130812973_nনিজেদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো হওয়াতে ছেলের জন্য সুচিকিৎসা নিশ্চিত করেছিলেন মলি; কিন্তু হাসপাতালে যাওয়া-আসা করার সময়ে তার উপলব্ধি হয় যে, অন্যান্য অবহেলিত রোগিদেরও এমন সুচিকিৎসা দরকার। তিনি দেখলেন সমাজের মানুষের মধ্যে এই রোগ সম্পর্কে তেমন কোনো সচেতনতাই নেই—যেখানে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এখনও আবিষ্কার হয়নি এর প্রতিষেধক। খুললেন ফেইসবুক আইডি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালাতে লাগলেন প্রচারণা। সাড়াও পেলেন ব্যাপক। পাশে দাঁড়ালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। তাদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক সালমা আফরোজ, অধ্যাপক এম. এ খান, সহযোগি অধ্যাপক অখিল রঞ্জন বিশ্বাস, সহকারি অধ্যাপক হুমায়রা নাজনিন, সহকারী অধ্যাপক কামরুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের মেডিকেল অফিসার লুৎফুর রহমান, মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকদের সংগঠন ‘প্ল্যাটফর্ম’ বিশেষভাবে বনফুল রায় এবং ডা. মোহিব নীরব। গাজীপুর জেলারসহ বাংলাদেশের কয়েকজন সমাজসেবাকর্মী এবং তিনি বিশেষভাবে স্মরণ করেন হিমোফিলিয়া রোগীদের প্রাণের সংগঠন হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ। তার মতে, রোগীদের একমাত্র আস্থার ঠিকানা এই সোসাইটি।

এই সংগঠনের মাধ্যমে উপকৃত হওয়া অলিউল্লাহ বলেন, ‘আমি এই রোগ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। ঘরে বসে বসে পঙ্গু হতে চলছিলাম।ফেসবুকে আলোর দিশা হয়ে এলেন মলি আন্টি। আমাকে পরামর্শসহ হিমোফিলিয়া সোসাইটি থেকে চিকিৎসা পেতে সাহায্য করলেন।

উল্লেখ্য, মলির স্বামী মো. নাজিম উদ্দিন সব সময় পাশে থেকেছেন তার। তিনি হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ-এর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য।

হিমোফিলিয়া রোগী শরিফুল এবং ইকবাল। তারা বলছিলেন, আমাদের পরিবারে আমরা দুইভাই রোগী, আমার বাবা আমাদেরকে নিয়ে অথই সাগরে পড়ে গিয়েছিলেন।পাশে দাঁড়ালেন মেরিন সুলতানা মলি আন্টি এবং তার স্বামী নাজিম আংকেল। এ রকম আরো অসংখ্য নজির আছেন ।

মেরিন সুলতানা মলির পরামর্শ

হিমোফিলিয়া সোসাইটির সদস্য হওয়া, বিলম্বিত রক্তক্ষরণে প্লাজমা, ফ্যাক্টর, ফ্রেশ ব্লাড, বরফ সেক এবং দ্রুত একজন হেমাটলজিস্ট এর পরামর্শ গ্রহন করা। তিনি তার স্বামী ও হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর কাছে কৃতজ্ঞ। তরুণদের জন্য তার পরামর্শ, সময় টাকে ভালো কাজে লাগান, গতানুগতিক চিন্তার বাইরে এসে চিন্তা করুন।তিনি হিমোফিলিয়াসহ অন্যান্য রক্তরোগীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বৃত্তবান মানুষের কাছে আহ্বান জানান।

Sharing is caring!

Leave a Comment