ছয় তরুণের ‘কুক অ্যান্টস’

ছয় তরুণের ‘কুক অ্যান্টস’

  • উদ্যোক্তা ডেস্ক

সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ব্যবসার ধারণা। কেবল মুনাফা নয়, সঙ্গে যোগ হয়েছে সামাজিক, মানবিক পরিবেশগত দায়বদ্ধতা। বলাই বাহুল্য ওই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। এমন একটি উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশের ছয় তরুণ—অমিত ইনজামাম, মুশফিক, ইখতিয়ার, নেয়ামুল ও তুষার। নারীর ক্ষমতায়ন ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের লক্ষ্যে তারা গড়ে তুলেছেন ইন্টারনেটভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ‘কুক অ্যান্টস’। নিরাপদ খাদ্য সরবরাহের গুরুত্বটি তাদের সামনে আসে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে। ব্যাচেলর জীবনে বাইরের খাবার খেয়ে নানা সমস্যার মোকাবেলা করতে গিয়ে কেবলি মনে হতো যদি ঘরের খাবার পেতাম! সঙ্গে যোগ হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়টি আমাদের দেশে গৃহকর্মে নারীদের শ্রমের আর্থিক মূল্যায়ন হয়নি কখনই। তারা নিজেদের বাড়ির রান্নায় যে শ্রম দেন সেখান থেকে যদি কোনভাবে তাদের আর্থিক প্রতিদান দেয়া যায় তাহলে তা নারীর ক্ষমতায়নকে এগিয়ে দেবে একধাপ। এই দুটো বিষয়কে মাথায় রেখে যাত্রা শুরু ‘কুকঅ্যান্টস’ এর।

ধারণাটি প্রথম ডালপালা মেলে অমিত রায়ের মাথায়। তিনি শেয়ার করেন বন্ধুদের সঙ্গে। অতঃপর ৬ জনের যাত্রা শুরু। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে ৬ জনের প্রত্যেকেই বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত। সমাজের জন্য কিছু করার মানসিকতা সহজে তাদের বেঁধেছে এক সুতায়। ধারণাটি মাথায় আসে ২০১৫ তে সত্যিকার অর্থে আইডিয়া ডেভলপ শুরু ২০১৬ তে দীর্ঘ এক বছর গবেষণা শেষে সম্প্রতি কমার্শিয়াল অপারেশন শুরু ২০১৭ তে। তাদের আছে দুটি এ্যাপ। একটি কাস্টমারদের জন্য ও অন্যটি হোম শেফদের জন্য। প্লেস্টোরে ঈঙঙকঅঘঞঝ লিখে সার্চ দিলেই খোঁজ মিলবে। আছে একটি ওয়েবসাইট সেখানেও অর্ডার দেয়া যায়। পুরো সফটওয়্যারটি তৈরি করেছেন তারা নিজেরা এবং ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত মানউন্নয়নের কাজ করছেন আরও ভাল সেবা দেয়ার আশায়। পাশাপাশি তারা কাজ করছেন এ্যাপেলের জন্য এ্যাপ তৈরির। তাদের মূল কাজটি হলো, প্রতিদিন গৃহে নারীরা যে রান্না করেন তা পরিমাণে কিছুটা বাড়িযে তাদের এ্যাপের মাধ্যমে বাজারজাতকরণ। বিষয়টি এমন যে, তাদের নিবন্ধিত একজন শেফ। শেফদের জন্য তৈরি এ্যাপের মাধ্যমে জানালেন তিনি আগামী দিন কি রান্না করছেন। তিনি কোন এলাকায় অবস্থান করেন। এবার ‘কুকএ্যান্টস’ কাস্টমারদের জন্য চালু এ্যাপের মাধ্যমে ক্রেতা খুঁজে বের করে সেফকে জানাবে। দেখা গেল যে গৃহিণী বাড়িতে ৫ জনের জন্য রান্না করতেন তিনি বাড়তি আরও ৫ জনের রান্না করে কিছু উপার্জনের সূযোগ পেলেন। অন্যদিকে ক্রেতারাও পাচ্ছেন ঘরে তৈরি খাবারের স্বাদ। খাবারের প্যাকেজিং, ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া সব দায়িত্ব ‘কুক এ্যান্টস’ কর্তৃপক্ষের। নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি সব সময় মাথায় রেখেছে এই তরুণরা। শেফ থেকে শুরু করে প্যাকেজিং, ডেলিভারি সব কিছুতেই অনুসরণ করা হয়। ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য অধিদফতর’ এর গাইড লাইন। শেফদের রান্নাঘর পরিদর্শন করে মানের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তাদের ট্রেনিং দেয়া হয় সরকারী নির্দেশনা অনুসারে। কোয়ালিটি কট্টোল টিম সপ্তাহে একবার রান্নাঘর পরিদর্শন করেন। যে বাক্সটিতে খাবার সরবরাহ করা হয় সেটি শতভাগ পরবেশনবান্ধব ও রিসাইকেল যোগ্য। এ মুহূর্তে ‘কুকএ্যান্টস’ এর নিবন্ধিত নারী শেফ ৭০ জন। নিবন্ধনের অপেক্ষায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ১২০ জন আর অপেক্ষায় ৬০০ অনুরোধ। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসায় ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা বর্তমানে একটি আলোচিত বিষয়। বিশেষ করে শেফেরা যখন নারী তখন ‘কুকএ্যান্টস’ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি ভাবতে হয়েছে আলাদা করে। তাদের ডেভেলপ করা সিস্টেমটি এমন যে হোম শেফ তার কোন ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন মোবাইল নম্বর, ঠিকানা শেয়ার না করেও ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

আপাতত ঢাকাভিত্তিক শুরু হলেও এই তরুণদের ইচ্ছা ধারণাটি দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া। আপাতত তারা লাঞ্চ সরবরাহ করলেও আগামীতে ব্রেকফাস্ট ডিনারসহ অন্যান্য সময়ের খাবারও সরবরাহ করতে চান। এ ছাড়াও তাদের আছে হোম মেড ক্যাটারিং সার্ভিস। বড় অর্ডার হলে তারা আইটেমগুলো ভাগ করে দেন হোম শেফদের মাঝে। এভাবেই সম্প্রতি এডিবির অর্ডারে ৬ জন হোম শেফের খাবার সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি তাদের প্ল্যাটফর্মে যুক্ত নারীরা যাতে নিজেদের একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের জন্য ট্রেনিং মেলার আয়োজনও আছে তাদের ভাবনায় কেবল দেশে নয় উদ্যোগটি নিয়ে তারা দেশের বাইরে প্রতিনিধিত্ব করতে চান বাংলাদেশের। তাদের খাবারের মূল্যও হাতের নাগালে প্রতিটি লাঞ্চ প্যাকের মূল্য ১০০-১৫০ টাকার মধ্যে। ১টি অর্ডারও গ্রহণ করা হয়। ডেলিভারি ফ্রি, রান্না শেষ হওয়ার দেড়ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি করা হয়।

কথা বলতে গিয়ে জানা গেল বাংলাদেশে স্টার্টআপ নিয়ে অনেক কিছুই হয়েছে কিন্তু শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়ার ঘটনাই বেশি। এ ছাড়াও বাইরের দেশে স্টার্ট আপে যেভাবে বিনিয়োগ হয় না। আমাদের এখানে আইডিয়ার ওপর বিনিয়োগকারী সংস্কৃতি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। তবে পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। উচ্চ শিক্ষিত এই ছয় তরুণ যে কোন ভাল চাকরিতে নিজেদের ভাগ্য গড়ে নিতে পারত। কিন্তু চাকরি না করে তারা চাকরিদাতা হতে চেয়েছে। বুকে সাহস ছিল, ছিল ব্যতিক্রম কিছু করার স্বপ্ন। সে ভাবনা থেকেই তাদের এই উদ্যোগ যাত্রা শুরু ‘কুক এ্যান্টসের’ সফল কিংবা ব্যর্থ যাই হোক এই তরুণদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ এটি বলাই যায়।

Sharing is caring!

Leave a Comment