গণিত পাগল একটি দেশ

গণিত পাগল একটি দেশ

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

শিক্ষিতের বিচারে এখনো বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে জাপানিরা। শুরুটা হয় স্কুল থেকেই। দেশটার পড়াশোনার ধরনটাই আলাদা। নোভাক জকোভিচ ফাউন্ডেশন ডট অর্গ সাইট থেকে দেশটির প্রাথমিক পড়াশোনার মজার কিছু দিক সম্পর্কে জানুন এই প্রতিবেদনে।


১৯ গুণ ১৬ সমস্যাটির সমাধান করতে তোমাদের কত সময় লাগবে? নিশ্চয়ই মিনিটখানেক। এবার দেখো তো ১২৫ গুণ ৬৮৫ করতে কতক্ষণ লাগে? খাতা-কলম নিয়ে বসে প্রথমে তিনটি অঙ্ক দিয়ে গুণ করে আবার পুরোটা যোগ করতে বেশ সময় লেগে যাওয়ার কথা। এমন সমস্যা সমাধান করতে জাপানের ছাত্র-ছাত্রীদের লাগে কয়েক সেকেন্ড। পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু করে প্রায় সবাই এমন জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধানে বেশ পারদর্শী। মাত্র কয়েকটি লাইন টেনে তারা গণিতের জটিল সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। এটি সম্ভব হয়েছে তাদের বৈপ্লবিক শিক্ষাপদ্ধতির কারণেই। বিশ্বে সাক্ষরতায় জাপানই সেরা। জাপানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পদ্ধতি বাকি বিশ্ব থেকে একেবারেই আলাদা। তারা গণিতকে আরেকটি ভাষা মনে করে শেখে।

গবেষণায় উঠে এসেছে কোনো বিষয় একবার অন্যকে পড়ালে সেটির ৯০ শতাংশ মনে থেকে যায়। যেখানে নিজে পড়ে, শিক্ষকের কথা শুনে মনে রাখা যায় মাত্র ৪০ শতাংশের মতো। তাই জাপানের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাপদ্ধতি হচ্ছে আলোচনানির্ভর। এখানে শিক্ষক নিজেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়িয়ে যান না; বরং শিক্ষক পাঠ বুঝিয়ে দেওয়ার পর ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে শেখে। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষেই আছে ইন্টারনেট সুবিধা। ছাত্র-ছাত্রীদের আলাপ-আলোচনাকে উদ্বুদ্ধ করতে জাপানের নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের মধ্যেই দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। যাতে তারা খাওয়ার সময় নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে পারে। মনে রাখার বিষয়টির দিকে জাপানের আলাদাভাবে নজর দিতেই হয়। কারণ নিম্ন মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে দেশটির শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করতে হয় দুই হাজার ১৩৬টি বর্ণ। বাংলায় যেখানে স্বর ও ব্যঞ্জনবর্ণ মিলিয়ে ৫০টি বর্ণ মনে রাখতে হয়।

জাপানের শিক্ষাব্যবস্থা মোট ১৬ বছরের। এর মধ্যে ছয় বছর পড়তে হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, তিন বছর নিম্ন মাধ্যমিক, তিন বছর উচ্চ মাধ্যমিক ও চার বছর স্নাতক। এর মধ্যে প্রাথমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক আবশ্যিক। দেশটির শতভাগ শিক্ষার্থীই নিম্ন মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষিত। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও জাপানে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার হার ৯৬ শতাংশ ও শহরের দিকে তো সবাই পড়ে। জাপানের ক্লাসের দৈর্ঘ্য ছয় ঘণ্টা। লম্বা ক্লাস হলেও শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয় না; বরং ৮৫ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী স্কুলে থাকতেই মজা পায়।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু হলেও দেশটিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেও বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। প্রায় সব জাপানি ছাত্র-ছাত্রীই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগেই কোনো না কোনো প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে থাকে।

জাপানের পড়াশোনা নিয়ে মজার কিছু তথ্য—

১. জরিপে দেখা গেছে জাপানে কোনো শিক্ষার্থীই দেরি করে ক্লাসে আসে না বা ক্লাস ফাঁকি দেয় না।

২. ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী অত্যন্ত মনোযোগী। তারা স্কুল ও কলেজের কোনো লেকচার ফাঁকি দেয় না।

৩. ক্লাসে ঢোকার পর শিক্ষককে ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বেশি সময় লাগে না।

৪. স্কুলে জাপানিরা সবচেয়ে বেশি সময় দেয় গণিতে।favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment