পাহাড় জয়ের নেতৃত্বে নারী

পাহাড় জয়ের নেতৃত্বে নারী

  • লিডারশিপ ডেস্ক

আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ছড়িয়ে আছে অনেক মেধাবী তরুণী, যারা পরিচালনা করছেন সমাজের পরিবর্তন এনে দেয় এমন অনেক সংগঠনের। আজকে এমনই তিনজন সংগঠক সম্পর্কে বিস্তারিত থাকছে এই প্রতিবেদনে।


উপমা আহমেদ

প্রেসিডেন্ট, ইভোলিউশন ৩৬০

আনিকা সুবাহ আহমেদ উপমা। উপমার নিজের গড়া সংগঠন ‘ইভোলিউশন ৩৬০’ কাজ করে তরুণদের নিয়ে, কাজ করে নারীদের ক্ষমতায়নে। সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি, এছাড়া সম্প্রতি ইয়ুথ লিডারের স্বীকৃতি গ্রহণ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের নিকট থেকে।

উপমা আহমেদ জানালেন, ‘জাতিসংঘের নারী সংস্থার একটি প্রোজেক্ট হচ্ছে ‘এম্পাওয়ার ফর ওমেন।’ দীর্ঘ ৩ ধাপের অনলাইন পরীক্ষার পর সর্বমোট চার হাজার প্রার্থী থেকে বিশ্বব্যাপী একজন নির্বাচিত হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশি হিসেবে নিজের নাম দেখে সত্যি বিস্মিত হয়েছিলাম। আসল প্রেরণাটা আসে এখান থেকেই। বাংলাদেশে এসডিজি ৫-এর বাস্তবায়ন এবং নারীর ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা করতে কিছু আগ্রহী বন্ধুবান্ধব নিয়ে গড়ে তুলি ‘ইভোলিউশন ৩৬০’। এছাড়া নাইজেরীয় একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নারীর অধিকার সমর্থনে কাজ করছি এবং জাতিসংঘের অধীনে থাকা সংস্থায় বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব প্রথম এবং একমাত্র প্রতিনিধি হয়ে।

উপমা আহমেদ স্বপ্ন দেখেন তার নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান ‘ইভোলিউশন ৩৬০’-এর মাধ্যমে তিনি তরুণদের নিয়ে তার লক্ষ্য পূরণ করবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্য বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীর অর্জনের পাল্লাও বেশ ভারী। ওয়াইএবি থেকে উপমাকে ‘ইউথ লিডারশিপ’ ক্যাটাগরিতে সম্মাননা প্রদান করে বাংলাদেশের ১০ সাহসী নারীর একজন হিসেবে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ছায়া জাতিসংঘে অংশগ্রহণ করে ‘বেস্ট ডেলিগেট’ এবং ‘আউটস্ট্যান্ডিং ডেলিগেট’ হিসেবে সর্বমোট ৫টি আওয়ার্ড গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘কনফারেন্স এইড’ হিসেবে কাজ করার মধুর অভিজ্ঞতাও হয়েছে উপমার।

মারজিয়া প্রভা

ফাউন্ডার, ফেমিনিজমবাংলা

তিনি। পথের স্কুলের কো-ফাউন্ডার। ডোনেট এ্যা প্যাড ফর হাইজিন বাংলাদেশের প্রজেক্ট ডিরেক্টর। মারজিয়া প্রভার গ্রাজুয়েশন ২০১৫ তে। এম আইএসটি থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পাস করে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাবিতে মাস্টার্সে পড়ছেন তিনি। থার্ড ইয়ার থেকেই অনলাইন পোর্টাল উইমেন চ্যাপ্টারে নিয়মিত লিখেন, এর মাঝে সাইবার হ্যারাজের শিকার হন। সেটা নিয়ে জিডি করা মামলা করা নিয়ে অনেক দূর, প্রভার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে ব্লগ লিখি। এরপর বহু মেয়ে হেল্প চাইতে আসে তার কাছে। বাকি গল্পটা নিজেই বললেন, ‘তখন থেকে ফেমিনিজমবাংলা ডটকম অনলাইন সাইট খুলি। তখন আমি ফাইনাল ইয়ারে লাস্ট সেমিস্টারের এক্সাম দিচ্ছি। ফেমিনিজমবাংলা (Feminismbangla.com) দুইটা কারণে খুলেছিলাম। নারীদের গল্প বলব বলে। আর নারীদের জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরি করব বলে। তখন থেকেই বিভিন্ন সফল নারী উদ্যোক্তা শিল্পী বহু নারীর ইন্টারভিউ নিয়েছি। এরপর পাস করার আগেই বিডিইয়ুথে জব পেয়ে গেলাম ক্রিয়েটিভ রাইটার হিসেবে।

বিডিইয়ুথ আর ফেমিনিজমবাংলা ডটকম দুইটা একসঙ্গে আমাকে অনেক হেল্প করেছে। এ সময় সাকির মাটি আর তারেক হাসান ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়, ড: নাজিয়া বিনতে আলমগীরের মাধ্যমে। সেই সুবাদেই DONATE A PAD FOR Hygiene Bangladesh ইভেন্টটি খুলি। মেডিক্যাল ক্যাম্পেইনের পাশাপাশি নারীদের ফ্রি প্যাড দিব বলে। আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে প্রথম ইভেন্টটি হয়। ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৫ তে।

ওই ইভেন্টিটির পর সার্ভে করে বুঝি গ্রামীণ নারীদের অবস্থা ভয়ানক। অনিরাপদ মাসিক জীবন যাপন করে। নোংরা ত্যানা, কাপড়ের ভিতর বালু ঢুকিয়ে ইউজ করা, শুকনা পাতা ব্যবহার করা। অনেকে কিছুই করে না। বেশি প্রবাহ হলে পুকুরে ডুব দেয়।

আমরা ঢাকায় ফিরে আলোচনা করি। গ্রামের স্কুল পর্যায়ে এই কাজের চিন্তা করি। এই থেকেই শুরু। প্রথম প্রজেক্টটি অনুষ্ঠিত হয় নোয়াখালীর জমিদারহাট বিএন উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর চারটি এরিয়াতে এই কাজ করি সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে। নামমাত্র দামের প্যাড প্রভাইড করতে পাশে দাঁড়ায় দুটি প্যাড ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপ। এই প্রজেক্টের আন্ডারে প্রায় ৫০০- ৭০০ মেয়ে প্রতি মাসে প্যাড সার্ভিস পাচ্ছে। মূলত এই প্রজেক্ট আমার ব্রেইন চাইল্ড হলেও, বাস্তবায়ন হয়েছে বন্ধু সাকির মাটি এবং তারেক হাসানের মাধ্যমে।

সুহা তাবিল

ভাইস-প্রেসিডেন্ট, বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব

সুহা তাবিলের সহ-শিক্ষাকার্যক্রম দেখলেই চমকে উঠার মতো। এর মধ্যে সবচেয়ে যে পরিচয়টা দিতে ভালোবাসে সুহা সেটার নাম ভাইস প্রেসিডেন্ট, বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব। প্রথমেই বলেছি সে ব্যতিক্রম তার পরিচিতিতে। চলুন জেনে নেই কি কি করে সুহা— দ্য ক্লাইমেট রিয়েলিটি প্রজেক্টের ‘ক্লাইমেট লিডার’, ক্লাইমেট লঞ্চ প্যাডের ‘গ্রিন এম্বাসেডর’, স্টুডেন্টস ফর লিবার্টির ‘লোকাল কো-অর্ডিনেটর’, বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাবের ‘ভাইস প্রেসিডেন্ট’, রেড ক্রিসেট সোসাইটির সাবেক ভলান্টিয়ার, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের সাবেক ভলান্টিয়ার।

সুহার ক্যারিয়ার ক্লাবের নেতৃত্বদানের রয়েছে ক্যাম্পাস জুড়ে জনপ্রিয়তা। তিনি উপস্থাপনায় মাত করেছেন পুরো বুয়েট ক্যাম্পাসের বেশ ক’টি বড় প্রোগ্রাম। এছাড়া সাফল্য এসেছে বড়গণ্ডিতে ‘Power And Energy Hackathon by Ministry of Power, Energy and Mineral Resources’ এ পুরস্কার জিতেছে সুহার দল। সুহা তাবিল এ বছরের আগস্টে ইউএন ইয়ুথ ডেলিগেট- Summer Youth Assembly of United Nations। এছাড়া গ্লোবাল সাপ্লাই চেইন কম্পিটিশন ‘ISCEA Ptak Prize 2017’-এ ৭০% স্কলারশীপপ্রাপ্ত সুহার দল! পাঠক, এবার বলেন, প্রথমে কি ভুল বলা হয়েছিল?

সূত্র: ইত্তেফাকfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment