বন্ধু চেনার সূত্র

বন্ধু চেনার সূত্র

  • ফিচার ডেস্ক

লেখক হেলেন কেলার বলেছেন, ‘আলোর মধ্যে একা একা হাঁটার চেয়ে অন্ধকারে একজন বন্ধুর সঙ্গে হাঁটা ভালো।’ খুনসুটি, আড্ডা থেকে শুরু করে জোরালো প্রতিবাদ; সময়মতো যে তোমার পাশে হাজির, সে-ই তো আসল বন্ধু! কীভাবে বন্ধু চেনা যায় তা থাকছে এই প্রতিবেদনে।

বিপদে হাজির

ঘটনা নাহিদ ও ফাহাদের। মিরপুরের দুই কলেজে দুজন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। কলেজ আলাদা হলেও গলায় গলায় বন্ধুত্ব দুজনের। বাসাও কাছাকাছি। রাত ১১টা। নাহিদ ঘুমাচ্ছে। মোবাইলে কল রিসিভ করতেই ওই প্রান্ত থেকে ফাহাদের কণ্ঠ—দোস্ত, আম্মা হঠাৎ অসুস্থ! হাসপাতালে নিতে হবে। বাসায় আমি আর ছোট বোন ছাড়া…। আর বলতে হলো না। তার আগেই নাহিদ বলল, ‘তুই অ্যাম্বুল্যান্স কল কর, আমি আসছি।’ লাইন কেটে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আঘাতও পেল খানিকটা। তবে থেমে গেল না। বন্ধুর বাসায় যাওয়া চাই যেকোনো মূল্যে। বাসার লোকজনকে জানিয়ে রাখল। কেউ আপত্তি জানাল না। একছুটে বেরিয়ে গেল বাইরে। হাসপাতালে পৌঁছেই দায়িত্ব শেষ করল না নাহিদ। সারা রাত ওদের সঙ্গেই ছিল। তুমি যখন কোনো বিপদে পড়বে, তখন যে বন্ধুটি সর্বপ্রথম এগিয়ে আসবে, সে-ই তোমার ভালো বন্ধু। কারণ তোমাকে সাহায্য করতে গিয়ে সে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এগিয়ে এসেছে।

বন্ধুর পরিবার আমার পরিবার

কলেজে ওঠার পর নতুন কিছু বন্ধু হয়েছে সিয়ামের। কয়েকজনকে দাওয়াত দিল সিয়ামের জন্ম দিনের পার্টিতে। তাদের মধ্যে উদয়ও ছিল। ওমা! বাসায় আসার পর থেকে সিয়ামের চেয়ে তার তত্পরতাই যেন বেশি। আংকল-আন্টিকে কোনো কাজই করতে দিচ্ছে না। চটপট হাতে বেড়ে দিচ্ছে খাবার, ধুয়ে ফেলছে প্লেট। এর মধ্যেই আবার অন্যদের সঙ্গে টুকটাক জোকস করে আসছে। আর এভাবেই উদয় হয়ে গেল সিয়ামের একেবারে পারিবারিক বন্ধু। তো যে বন্ধুটি তোমার পরিবারের সঙ্গে একেবারে সহজে মিশে যেতে পারে, পরিবারের ময়লা থালাবাটি নিজের মনে করে ধুয়ে ফেলতে পারে, সে-ই তোমার আসল বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা রাখে। তবে হ্যাঁ, একই কাজ কিন্তু তোমাকেও করে দেখাতে হবে।

বন্ধু তোমায় বোঝে

ভালো বন্ধু একে অন্যকে বোঝে। এই বোঝা মানে ঠিক কিছু বৈশিষ্ট্য জানতে পারা নয়। এই বোঝার মানে হলো, মুখে হাসি থাকলেও আসল বন্ধু বুঝে ফেলবে—তুমি কোনো না কোনো কারণে বিষণ্ন বা কষ্টে আছ। আবার সময়ে সময়ে তোমাকে একা থাকার স্বাধীনতা যে দিতে পারবে, সে-ই হবে বন্ধু। তবে আবার অনেক সময় দেখা যাবে, তোমাকে খুব বেশি সময় একা থাকতে না দিয়ে তোমাকে জবরদস্তি করে হাসি-তামাশায় মশগুল করতে চাইছে, সে-ও কিন্তু ভালো বন্ধু। আবার অন্য কেউ যদি তোমার নামে একগাদা বদনাম করে বসে (হোক সেগুলো সত্য), তবে সেগুলো বিশেষভাবে যে পাত্তা দেয় না সে-ও যেমন বন্ধু, আবার যে কিনা সেগুলো কিছুটা পাত্তা দিয়ে তোমাকে শোধরাতে বলবে, সে-ও তোমার বন্ধু। অর্থাৎ বন্ধুর মধ্যে খুব ‘বাড়াবাড়ি’র কোনো বিষয় নেই। তোমাকে ঠিক পথে রাখা আর মন ভালো রাখাটাই তার কাছে মুখ্য বিষয়।

অহিংসায় পরম বন্ধু

ধরো, তুমি পরীক্ষায় ভালো করেছ। কিন্তু তোমার বন্ধুরা তোমার থেকে কম নম্বর পেয়েছে। কেউ কেউ আছে, রাগে-ক্ষোভে তার মার্কশিট ফেলে দেবে। কিন্তু দেখা গেল, একজন তোমাকে কংগ্রাচুলেশন জানাচ্ছে। ভেবে নেবে, সে-ই তোমার আসল বন্ধু। ‘তোমার সাফল্যে যে হিংসা না করে উল্টো খুশি হয়, সে-ই আসল বন্ধু। অবশ্য মাঝেমধ্যে ওই খুশির আড়ালে খানিকটা হিংসার অভিনয় থাকতে পারে। সেই অভিনয়টা ধরতে পারা অবশ্য কঠিন কাজ নয়!

সত্যবাদী, স্পষ্টবাদী

বন্ধু বানাবে! যাচাই করো, বন্ধুটি স্পষ্টবাদী কি না। নাকি তোমার সঙ্গে এটা-ওটা প্রায়ই লুকিয়ে রাখে। তোমার খারাপ জিনিসগুলো মুখের ওপর বলে দিতে পারছে কি না সেটিও দেখো। ভালো বন্ধু হলে কিছু না কিছু বলবেই। খোলামেলা কথা বলে, বন্ধুর প্রতি রাগ-অভিমান কম কিংবা কোনো বিরোধ থাকলে সামনাসামনি মিটিয়ে নেয় কি না! পেছনে পেছনে টুকটাক সমালোচনা চলতেই পারে, তবে সেটি যদি ঘন ঘন ও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তবে সে কিছুতেই বন্ধু হতে পারে না।

শেয়ার করা যায়?

বন্ধুর সঙ্গে মন খুলে কথা বলব না, তা কী করে হয়! যার সঙ্গে তোমার সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারো, আবার সে-ও তার সমস্যাগুলো শেয়ার করে, তার সঙ্গে তো বন্ধুত্ব বটেই। যে তোমার সমস্যা শুনে বিরক্তি বোধ করবে, তার সঙ্গে ভালো বন্ধুত্বটা হয় না।

সূত্র: কালের কন্ঠ

Sharing is caring!

Leave a Comment