পড়তে যাই সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে

পড়তে যাই সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে

  • মারুফ ইসলাম

দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্কের সদস্য দেশের শিক্ষার্থীদের বিশ্বমানের শিক্ষা এবং গবেষণার সুযোগ করে দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি। বিশ্ববিদ্যালয়টির যাত্রা শুরু ২০১০ সালে। সংক্ষেপে এটি ‘সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়’ নামেই পরিচিত। সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস নয়াদিল্লিতে হলেও সার্কভুক্ত অন্য ৭টি দেশে এর আঞ্চলিক ক্যাম্পাস থাকবে। মূল ক্যাম্পাসের অবকাঠামো নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে মূল ক্যাম্পাস নির্মাণ কাজ শেষ হবে।

পড়ার বিষয়

বর্তমানে নয়াদিল্লির চাণক্যপুরীর আকবর ভবনে অস্থায়ী ক্যাম্পাসের ১৪ তলা ভবনে সাউথ এশিয়ান ইউনির্ভাসিটির পাঠদান কার্যক্রম চলছে। ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ইকনোমিক্স আর কম্পিউটার সাইন্স, এ দুই বিষয়ে মাস্টার্স প্রোগ্রাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক যাত্রা শুরু। বর্তমানে বায়োটেকনোলজি, অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স, ডেভেলপমেন্ট ইকনোমিকস, আইন, সমাজবিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তথা সাতটি বিষয়ে মাস্টার্স এবং এমফিল/পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য করা হয়েছে বিশেষ ভিসা নীতির ব্যবস্থা।

সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীদের বিশেষ সুবিধা

সার্কভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা যে কোনো ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশ থেকে পড়তে যাওয়া আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহদী হাসান জানান, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটির নানা রকম সুযোগ-সুবিধার কথা। তিনি জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কোনো ধরনের সেশনজোট নেই। বিশ্বমানের ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা নিয়মিত ক্লাস নিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ফ্যাকাল্টি ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে সেখানে ক্লাস নেন।

এখানকার শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে আবাসিক হোস্টেল সুবিধা। বেশ পরিপাটি একরুমে চারজন থাকার ব্যবস্থা আছে। রয়েছে ২৪ ঘণ্টা রিডিং রুম, সুপারিশ লাইব্রেরি ফ্যাসিলিটি। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমন্বিত ল্যাব, ক্যাম্পাসজুড়ে ওয়াইফাই ব্যবস্থা, প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মেডিকেল সুবিধা। এছাড়া টিউশন ফিও তুলনামূলক কম। অপর বাংলাদেশী শিক্ষার্থী মৌমিতা জানান, অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সমন্বিত ঝকঝকে সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। ছবি: ওয়েবসাইট।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আড্ডা। ছবি: ওয়েবসাইট।

সেখানে নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি রয়েছে গ্রুপ স্টাডির ব্যবস্থা। তত্ত্বগত শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক শিক্ষাটাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদের প্রেজেন্টেশন স্কিল, ফাংশনাল নলেজ সৃষ্টিতে গুরুরোপ করা হয়। ক্লাস সাইজ ছোট হওয়ায় প্রতি শিক্ষার্থীর সমান গুরুত্ব দিতে পারেন শিক্ষকরা। এখানে কোনো শিক্ষার্থীর খারাপ ফল করার সুযোগ নেই।

এক্সট্রা কারিকুলারেও এখানকার শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে নেই। খেলাধুলা, বিতর্ক, গণিত অলিম্পিয়াডে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ জোরালো। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের শিক্ষার্থীদের একটা আন্তঃসংযোগ ঘটে এখানে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এশিয়া বোধ সৃষ্টি করছে সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষা নিয়ে যাতে দক্ষিণ এশিয়াকে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে পারেন সেদিকটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় এখানে। সবমিলিয়ে উচ্চশিক্ষার তীর্থস্থান হয়ে উঠেছে সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়।

যেভাবে ভর্তি

প্রতিবছরের মার্চ মাসে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা (এটট্রেন্স টেস্ট) অনুষ্ঠিত হয় এপ্রিলে। ক্লাস শুরু হয় জুলাই থেকে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১০ ইউএস ডলার ৬৫০ রুপি বা ৮০০ বাংলাদেশী টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে নির্দিষ্ট তারিখে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই অনলাইনে ভর্তি ফরম পূরণ করা যায়। অন্যদিকে নির্ধারিত ফরম প্রিন্ট করে হাতে পূরণ করে বাই পোস্টে বা কুরিয়ারেও পাঠানো যায়। ভর্তি পরীক্ষা ফি অনলাইনে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে অথবা ব্যাংক ড্রাফট করে পাঠানো যেতে পারে।

এ প্রক্রিয়া শেষে আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রবেশপত্র ই-মেইলে পাঠানো হবে। ভর্তির জন্য আবেদন করতে কিংবা বিস্তারিত জানতে ভিজিট করতে পারেন http://sau.int/ এই ঠিকানায়।

আসন : প্রতিটি বিষয়ে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের বিদেশী শিক্ষার্থীরাও সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পান। তবে ৫০ ভাগ আসন ভারতের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ ভাগ করে ২০ ভাগ সিট বরাদ্দ। আফগানিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপালের জন্য বরাদ্দ ৪ ভাগ আসন। বাকি আসনে দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বিষয়ে তিনজন করে শিক্ষার্থী প্রতি বছর পড়ালেখার সুযোগ পায়। যে কোনো দুটি বিষয়ে আবেদনকারী ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন।

আবেদনের যোগ্যতা : বাংলাদেশের যে কোনো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী আবেদন করতে পারবেন। ইয়ার সিস্টেমে যাদের গড়ে শতকরা ৫০ ভাগ নম্বর আছে তারা ভর্তির যোগ্য। সেমিস্টার সিস্টেমের স্নাতকদের অন্তত ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ নম্বর থাকতে হবে।

পরীক্ষা পদ্ধতি : ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয়। সময় ৩ ঘণ্টা। ১০০ নম্বর ভাগ করা থাকে ২ ভাগে। প্রথম ভাগে থাকে ৪০ নম্বরের অবজেক্টিভ, ৬০ নম্বরের লিখিত।সাবজেক্টিভ ২০ নম্বরে দক্ষিণ এশিয়া সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞান আর ২০ নম্বরের বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন করা হয়। লিখিত ৬০ নম্বরের পরীক্ষা ৩ অংশে বিভক্ত। যেখানে তিনটি বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। একেকটি উত্তর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ শব্দের বেশি হওয়া যাবে না। আর লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নগুলো ফ্রি-হ্যান্ড রাইটিং টাইপ, আবার বিষয়ভিত্তিকও হতে পারে। সঠিক গ্রামার অনুয়ায়ী ইংরেজি লেখার যোগ্যতাও যাচাই করা হয়। ভর্তি পরীক্ষা একই দিনে ৮টি সার্ক দেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী একই প্রশ্নের মাধ্যমে একযোগে নেয়া হয়।

Manosh All events Final
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানস চৌধুরী ক্লাস নেন সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে।

দুই শিফটে পরীক্ষা নেয়া হয়। বাংলাদেশে পরীক্ষা সেন্টার দুটি। একটি ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অপরটি চট্টগ্রাম। অবজেকটিভের প্রশ্নগুলোর ভুল উত্তর করলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য .২৫ নম্বর কাটা যাবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রতিটি দেশ থেকে বিষয় অনুযায়ী চান্সপ্রাপ্তদের এবং অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে এমফিলে ভর্তির জন্য ভাইভা দিতে হবে। সরাসরি অথবা স্কাইপে সাক্ষাৎকার দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

স্কলারশিপ সুবিধা : সার্ক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সব শিক্ষার্থীই স্কলারশিপের সুবিধা পেয়ে থাকেন। এখানকার সবচেয়ে বড় স্কলারশিপ হলো প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ। স্কলারশিপ প্রাপ্তদের সুবিধাগুলো বিনা খরচে পড়াশোনা, হোস্টেলে থাকা ফ্রি ও খাওয়ার ব্যবস্থা।

প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীকে তার নিজের দেশ থেকে প্রথম হতে হবে। নিজ নিজ সাবজেক্টে চান্সপ্রাপ্তদের মূল লিস্টের প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকতে হবে। তাহলেই সরাসরি প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ পেয়ে যাবেন। এছাড়াও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে ১০০, ৫০, ২৫ ভাগ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। আগের বছরগুলোতে সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তার আওতায় প্রায় সব নন ভারতীয় শিক্ষার্থীরা তিন ক্যাটাগরিতে স্কলারশিপ পেত।

খরচ : দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি প্রতি সেমিস্টারে ৪৪০ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৩৫ হাজারের বেশি। বছরে দুটি সেমিস্টার। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি সাড়ে ৩ লাখ টাকার মতো। আবাসিক শিক্ষার্থীদের খরচ প্রতি সেমিস্টারের জন্য আরও ৪০ হাজার টাকা। ভর্তি ফি ৮ হাজার টাকা। সিকিউরিটি ডিপুজিট ৮০০০ টাকা, যা পরবর্তীতে ফেরত দেয়া হবে। কল্যাণ ট্রাস্টে ৫০ ভারতীয় রুপি দিতে হবে।

তথ্যঋণ : সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইট।favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment