ফাবিহার ইচ্ছাগুলো

ফাবিহার ইচ্ছাগুলো

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক

ফটোগ্রাফি করে স্কুলের প্রতিযোগিতায় পেয়েছে পুরস্কার। শিশু সাংবাদিক হিসেবে টুকটাক ভিডিও-রিপোর্টও করেছে। এর মাঝে করেছে মডেলিংও।


ছোট্ট ফাবিহা তখনো পড়তে শেখেনি। পত্রিকার ছবিতে চোখ বুলায়। তা দেখে তারও ছবি তুলতে ইচ্ছা করে। ফাবিহা তার মাকে বলে, ‘মা, আমিও প্রকৃতির ছবি তুলতে চাই। গাছ, পাখি, আকাশের ছবি তুলতে চাই।’ ফাবিহার আম্মু উত্তর দেয়, ‘ছবি তুলতে গেলে আরেকটু বড় হতে হবে।’ আসলে মা চান না এই বয়সে পড়ালেখা ছাড়া অন্য কিছুতে মনযোগ দিক মেয়ে। ফটোগ্রাফার হওয়ার শখ পূরণ না হওয়ায় ফাবিহা ভাবল মডেল হলে কেমন হয়। তখন ফাবিহা পড়ে সবে ক্লাস সিক্সে। শখের কথা মাকে বলতেই আগের উত্তর, ‘আগে বড় হও।’ অবশেষে যোগ দিল স্কাউটে। রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সার্টিফিকেট পাওয়া চাই তার। প্রথমে মেট্রো পরীক্ষা। পরে অঞ্চলভিত্তিক ও তারপর জাতীয়। পথ বড় কঠিন।

ফাবিহার অনেক বন্ধু প্রথম প্রথম আগ্রহ দেখালেও পরে সরে দাঁড়ায়। ‘তোমাকে দিয়ে স্কাউটিং হবে না। তুমি পারবে না। অনেক কষ্ট করতে হয়।’ এমন কথা হরহামেশা শুনতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু অনড় ফাবিহা ঠিকই শুরু করে স্কাউটিংয়ের কঠিন যাত্রা।

সে জানাল, ‘স্কাউটের সর্বশেষ পর্যায় হলো প্রেসিডেন্টস স্কাউট অ্যাওয়ার্ড। এর জন্য ধাপে ধাপে পরীক্ষা দিতে হয়। প্রথম পর্যায়ে মেট্রো পরীক্ষা। মৌখিক-লিখিত দুটো পরীক্ষা আছে। পাস করলে পরে অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষা। এখানে দিতে হয় সাঁতারের পরীক্ষাও। এখানে পাস করলে জাতীয় পর্যায়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ আসে। মেট্রো পরীক্ষায় সহজভাবেই পাস করেছিলাম। অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষা কঠিন ছিল। অনেকে ফেল করলেও আমি পাস করি।’

শেষ পর্যন্ত ফাবিহাদের স্কুল থেকে জাতীয় পর্যায়ের জন্য মাত্র সাতজন নির্বাচিত হয়। গাজীপুরে ক্যাম্পিংয়ে যায় ফাবিহা বুশরা। প্রথমবারের মতো থাকতে হয়েছিল ঘরের বাইরে। ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফাবিহা জানাল, ‘বাসায় মায়ের আদরে ছিলাম। যখন যা খেতে চেয়েছি দিয়েছে। ক্যাম্পিংয়ে গিয়ে বাস্তবতা বদলে গেল। খাবারের ঠিক নেই। গোসল করার সময় নেই। দেখা গেছে রাত ২টায় ঘুমুতে গেছি, আবার ৫টা বাজতেই ডেকে তোলা হলো।’

এসবে অনভ্যস্ত ফাবিহার মৌখিক পরীক্ষায় খারাপ হয়। লক্ষ্যের কাছাকাছি এসে ছিটকে পড়ে। তবে আত্মবিশ্বাসী ফাবিহা আবার যোগ দিয়েছে স্কাউটে।

এর মাঝে চলেছে টুকটাক মডেলিংও। ফটোগ্রাফিতেও পাকাচ্ছে হাত। কয়েকটি পত্রিকায় মডেল হিসেবে তার ছবিও ছাপা হয়েছে। দুটো নামকরা কম্পানির বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছে। ‘উত্তরা থেকে একদিন আসার সময় বিলবোর্ডে নিজের ছবি দেখি। তখন এটা ভেবে ভালো লাগে যে বড় হওয়ার আগেই একটা ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।’ তবে মায়ের কড়া নির্দেশ, পড়াশোনার বাইরে এখন আর কিছুতে মাথা ঘামানো যাবে না।

বিভিন্ন স্কুল ও বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আয়োজনে পাঁচটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতেছে তিনটি পুরস্কার। ভিকারুননিসা নুন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আয়োজনে ‘ট্রাইউন ফেস্টিভাল ২.০-তে রানার্স আপসহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল অ্যান্ড কলেজের ফেস্টিভালে ফাবিহা জিতেছে প্রথম পুরস্কার।

খুদে সাংবাদিক পরিচয়ও আছে ফাবিহার। টুইঙ্কেল টিভি নামের একটি অনলাইন-ভিত্তিক শিশু-কিশোরদের চ্যানেলে হয়ে কাজ করেছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠানের ওপর রিপোর্ট করা ছিল তার কাজ। পরে অবশ্য পড়ালেখার চাপে আর কাজটা চালিয়ে যেতে পারেনি। কিন্তু অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এটাও বা কম কী।

এত কিছুর পরও অবশ্য পড়াশোনার লাগামে ঢিল পড়েনি একটুও। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী ও জেএসসি, দুটোতেই রয়েছে জিপিএ ৫। ফাবিহা এখন দশম শ্রেণিতে। বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা তার, নতুন নতুন আইডিয়া দিয়ে দেশকে বদলে দেওয়ার জন্য!favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment